আহাদ রাইয়ান: তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে পশ্চিমা বিশ্বের মত একটি কালচার আমাদের দেশেও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সেটি হল “কিশোর গ্যাং কালচার”। সাধারণত এরা ১৩-১৭ বছর বয়সী হয়ে থাকে এবং এদের ড্রাইভিং ফোর্স হিসেবে কাজ করে এলাকার কথিত বড় ভাইরা বা গডফাদাররা। তারা নিজেদের রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচয় দিয়ে আড়ালে আবডালে থেকে এসব গ্যাং পরিচালনা করে। কিশোর গ্যাং এর নেতারা অনেকটা সিনেমার “Don” দের মতো আচরণ করে থাকে। এরা নিজ নিজ এলাকায় মাস্তানি, মারামারি, হই হট্টগোল, চাঁদাবাজি, উচ্চস্বরে গান গাওয়া, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা থেকে শুরু করে কিডন্যাপিং, ধর্ষণ বা কোন কোন ক্ষেত্রে খুনও পর্যন্ত করে থাকে যা বর্তমানে শুধু সামাজিক সমস্যা না, একটি জাতীয় পর্যায়ের সমস্যা।
কিশোর অপরাধের শাস্তি যে হয় না তেমনটাও না। তবে আমাদের দেশে কিশোর অপরাধ আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি “১০ বছর কারাদণ্ড”। ফলে জেল থেকে বের হয়ে আবারো সেই একই কর্মকান্ডে জড়িয়ে পরে তারা। তাই এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আইনে অবশ্যই শক্তিশালী ও সময়োপযোগী পরিবর্তন আনতে হবে । রাজধানী ঢাকাতেই রয়েছে প্রায় ৫০টির মতো ভিন্ন ভিন্ন নামধারী কিশোর গ্যাং। এরা মাদক সেবন ও মাদক পাচারে যুক্ত। যা মোটেও একটি দেশের জন্য কোন সাধারণ সমস্যা নয়। ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম, বরিশাল, ময়মনসিংহ সিলেট, খুলনা, যশোর এই জায়গাগুলোতেও এই কালচার সক্রিয় রয়েছে। গত ১৫ বছরে শুধু ঢাকাতেই ১৩০ খুনের অভিযোগ মিলেছে যেগুলোর প্রত্যেকটি এই গ্যাংগুলোরই কৃতকর্মের ফল। তাই দ্রুত এদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সচেতন হতে হবে। অবশ্য ইতোমধ্যেই তারা এ সম্পর্কে ইতিবাচক আশ্বাস দিয়েছেন আমাদেরকে, যা সত্যিই প্রশংসনীয়।
একটি শিশুর সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ শিক্ষার প্রাথমিক ধাপ হচ্ছে পরিবার। কিন্তু, এখন বেশিরভাগ মা-বাবা তাদের বাচ্চাদের সময় দিতে ব্যর্থ হচ্ছে ফলে শিশুটির শারীরিক বৃদ্ধি তো হচ্ছে কিন্তু মানসিকভাবে সে থেকে যাচ্ছে অপরিপক্ক ও মূল্যবোধ বিবর্জিত। শিল্প বিপ্লবের এই মহাকালে প্রধান সমস্যাটি সৃষ্টি হয় মূলত পরিবার থেকে, মা বাবার তার সন্তানদের প্রতি করা অবহেলা, অসচেতনতা থেকে। এর ফলে যে শিশুটির বড় হয়ে আত্মউন্নয়নমূলক বাস্তব জ্ঞানে গুণী হয়ে সমাজ ও দেশের জন্য ভাবার কথা সে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর অপরাধে। একটি রাষ্ট্র থেকে সার্বিক দুর্নীতি দূর করা শুধু সেখানকার সরকার ব্যবস্থারই দায়িত্ব না, পরিবার ও সমাজেরও দায়িত্ব। তাই সমাজ থেকে, রাষ্ট্র থেকে এই কাট-মার কালচারকে নিশ্চিহ্ন করতে হলে রাষ্ট্রের পাশাপাশি সমাজব্যবস্থা ও সন্তানদের মা-বাবা দেরকেও সচেতন হতে হবে এবং সময় থাকতেই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
আহাদ রাইয়ান
সরকারী ব্রজমোহন কলেজ, বরিশাল
Leave a Reply